শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:২৬ পূর্বাহ্ন

প্রতিমা পূজা

বাঙ্গালি সনাতনী হিন্দুরা শক্তির পূজা করে। তাঁরা মৃন্ময়ীর মাঝে চিন্ময়ীর রূপ দেখতে পায়। তাঁরা কৃতজ্ঞ জাতি। বৃক্ষ আমাদের ছায়া দেয়, অক্সিজেন দেয়, খাবার যোগান দেয়। তাইতো সনাতনীরা অতিকায় বৃক্ষসহ সকল বৃক্ষকে শ্রদ্ধা করে, ক্ষেত্র বিশেষে পূজা করে।
তাঁরা অগ্নি, পবন, ভূমি ও বরুণকে দেবতা হিসেবে পূজা করে। হিন্দুদের বার মাসে তেরো পার্বণ। ইহা ছাড়াও সকাল, মধ্যাহ্ন, সন্ধ্যায় নিত্য পূজা তো রয়েছেই। অসীমকে সীমায় বেঁধে তাঁরা প্রাণের আকুতি জানায় নিজের মঙ্গল, পরিবারের মঙ্গল, দশের মঙ্গল, দেশের মঙ্গল তথা মহাবিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সকল প্রাণীর শান্তি কামনায়। বিভিন্ন দেবদেবীর আরাধনার মাধ্যমে মূলত তাঁরা এক ও অদ্বিতীয় ঈশ্বরকেই খুঁজে। তাদের বিশ্বাস,
‘রাম রূপে ধর ধনু মা, কৃষ্ণ রূপে বাঁশি
ভুলালি শিবের মন হয়ে এলোকেশী, হে মা পার্বতী।’
হিন্দুরা শাশ্বত কাল ধরে মাটির প্রতিমা তৈরি করে বিশ্বাসের মাধ্যমে তাতে প্রাণ প্রতিষ্ঠিত করে নিজেকে সমর্পিত করে আসছে।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শ্রীমদ্ভগবদগীতায় অষ্টাদশ অধ্যায়ের (মোক্ষযোগ) ৬৬ নম্বর শ্লোকে বলেছেন, সমস্ত ধর্মের আশ্রয় পরিত্যাগ করে তুমি কেবলমাত্র আমার শরণ গ্রহণ করো। আমি তোমাকে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত করবো তুমি শোক করোনা।

চতুর্থ অধ্যায়ের (জ্ঞান যোগ) ১১ নম্বর শ্লোকে বলেছেন, যে-ভক্ত যে-ভাবে আমার শরণাগত হয়, আমি তাকে সেই ভাবেই আশ্রয় দান করে থাকি; কারণ সকল মনুষ্য সর্বপ্রকারে আমারই পথের অনুসরণ করে। অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণ একেশ্বরবাদ ও বহুরূপী দুটি পথেই উপাসনার দ্বার খোলা রেখেছেন।
শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব ও একই কথা বলেছেন, ‘কারো উপর বিদ্বেষ করতে নাই। শিব, কালী, হরি -সবই একের ভিন্ন ভিন্ন রূপ। যে এক করেছে সেই ধন্য। বহি: শৈব, হৃদে কালী, মুখে হরিবোল।’
সনাতন ধর্মে সাকার ও নিরাকার দুটি পথেই ঈশ্বর পূজিত হন। শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব এ বিষয়ে বলেছেন, ‘জল আর বরফ- নিরাকার আর সাকার। যা জল তাই ঠান্ডায় বরফ হয়, জ্ঞানের গরমীতে বরফ জল হয়, ভক্তের হিমে জল বরফ হয়।’
তিনি বলেছেন, ‘ব্রহ্ম আর কালী অভেদ। যেমন অগ্নি আর দাহিকা শক্তি। অগ্নি ভাবলেই দাহিকা শক্তি ভাবতে হয়। কালী মানলেই ব্রহ্ম মানতে হয় আবার ব্রহ্ম মানলেই কালী মানতে হয়।’
Print Friendly, PDF & Email

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2021
Design By Rana